৬ই জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় পরিবেশ অধিদপ্তর এর মিলনায়তনে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে "উষ্ণায়ন, খরা ও মরুকরণরোধে ভূমি ও জলাশয় রক্ষার এখনি সময়" শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাপা'র সাধারণ সম্পাদক জনাব আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব ড.আব্দুল হামিদ।
প্রোগ্রামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাপা'র যুগ্ম সম্পাদক,জনাব আমিনুর রসুল। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ দিয়ে কর্মসূচি শুরু হলেও, গাছ কাটায় আমরা ১২ লক্ষ গাছ কর্তন করেছি এক বছরে, উষ্ণায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এটি। ফলে, দাবদাহ শুরু হয়েছে, কৃষি সভ্যতায় আঘাত হেনেছে।টেকসই বর্জ্যর বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগরের পাশ দিয়ে যে সুন্দরবন রয়েছে সেটি হচ্ছে বেড়িগেট, এটা রক্ষা করতে না পারলে খুলনা, চাঁদপুর, ঢাকা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ সব ডুবে যাবে, বিচ্ছিন্ন হবে, যেটি ৫০ বছর আগেই বঙ্গবন্ধু বলে গিয়েছেন।
প্রোগ্রামে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান।
তিনি বর্তমান খরা বিষয়ে কথা বলেন , সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও মরুকরণ সমস্যা নিয়ে তার প্রবন্ধে সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
এছাড়াও তিনি বৈশ্বিক দাবদাহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন, ১.৪৬ ডিগ্রি ভূ পৃষ্টের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০৩০ সাল আসতে দেরি হলেও আমরা ১.৬০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বৃদ্ধির আশা করছি যা হওয়ার কথা ছিল ২০৩০ এ গিয়ে, তবে আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ১৭% এলাকা সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। তিনি ঢাকার দক্ষিণ ও উত্তর কর্পোরেশন সিটির জলাশয় ও বৃক্ষ নিয়ে কথা বলেন তুলনামূলক তথ্য প্রদান করেন। বাংলাদেশে প্রায় ১৩-১৪ টা জেলায় খরা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফলে ২০-৩০% ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আগামী ২০-২৫ বছরে উত্তরাঞ্চলে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, এসব এলাকা মরুভূমির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ফুটে পারে। এছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করতে হবে। তিনি জোড়ালো দাবী জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে পরিবেশ ক্যাডার যুক্ত করা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অধীন প্রতিটি জেলায় একজন বিসিএস অফিসার নিয়োগ দেয়া সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
আরও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন,সানজিদা খান রিপা, প্রোগ্রাম ম্যানেজার এএলরডি। রেহনুমা , রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর,বেলা।
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, জলবায়ু সংসদের সভাপতি ও মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব তানভীর শাকিল জয়, এমপি। তিনি তার বক্তব্যে সকলকে পরিবেশ সচেতন হতে আহ্বান জানান। পরিবেশ দূষণকারী উপাদান প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে কাজ করে এর রোধকল্পে সমাধান খুঁজে বের করার আহ্বান জানান এবং এটি সকলের সহযোগিতায় কেবল সম্ভব বলে জানান। তিনি অারও বলেন, আমাদের প্রতিটি কাজের বিপরীতমুখী চিন্তা করেই উন্নয়নের দিকে আগাতে হবে। শুধু সরকার এর পক্ষে এটা সম্ভব নয়, সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশকে সংরক্ষনে রেখেই চিন্তা করতে হবে কিভাবে নতুন কিছু অর্জন করা যায়। পরিবেশের সাথে সচেতন করতে হবে নিজেদেরকে, কোনটার প্রয়োজন আগে সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। সবশেষে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণে বাজেট বর্ধিত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জলবায়ু সংসদের সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী এমপি। তিনি তার বক্তব্যে পরিবেশ বিপর্যয়ে তার সংসদীয় এলাকার অবস্থা তুলে ধরে, সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিবেশ নিয়ে নিবেদিত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি নিজের এলাকাসহ পুরো দেশের জন্য পরিবেশের জন্য কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন, প্রতিথযশা স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, পরিকল্পনার সাথে সাথে, কোথার থেকে শুরু করতে হবে সে বিষয়ে চিহ্নিত করতে হবে। ব্যক্তি থেকে শুরু করে সরকারি অধিদপ্তর পর্যন্ত সকলের এক সাথে কাজ করতে হবে, সরকারকে আরও শক্ত করে ক্ষমতা প্রয়োগ করে কথা বলতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী ভুমিকা পালন করার আহবান জানান।
বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম। তিনি তার বক্তব্যে , নদী দখল, ভূমিগ্রাস, বালিগ্রাসের পানিদূষণ, বায়ু দূষণ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সবশেষে সভাপতির বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি ড. আব্দুল হামিদ। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন, পাশাপাশি পরিবেশ নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান, এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সহায়তার আশ্বাস দেন। শেষে আয়োজক ১৮টি সংগঠনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।
Comment